বাংলাদেশে ২০২৫: সাইবার হুমকি, প্রস্তুতি ও দায়বদ্ধতার সময়
সাম্প্রতিক সময়ের বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের প্রায় সব খাতেই সাইবার হামলার হার আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে DDoS আক্রমণ, ওয়েবসাইট ডিফেসমেন্ট, অননুমোদিত ডেটা অ্যাক্সেস, র্যানসমওয়্যার এবং ফিশিং—এই পাঁচ ধরনের হুমকি সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। সরকারি ওয়েবসাইট, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পাবলিক সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম প্রায়ই আক্রমণের শিকার হচ্ছে। পর্যাপ্ত মনিটরিং না থাকলে অনেক ঘটনা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শনাক্তই হয় না।
আর্থিক খাত বর্তমানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। দেশের ভেতর ও বাইরে—দুই দিক থেকেই আর্থিক সিস্টেমকে লক্ষ্য করে ধারাবাহিক সাইবার আক্রমণ চালানো হচ্ছে। অনলাইন ব্যাংকিং বৃদ্ধি, মোবাইল ফিন্যান্স সেবার বিস্তার এবং আন্তর্জাতিক লেনদেন ডিজিটাল হওয়ার ফলে এই খাতে আক্রমণ বাড়ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো পর্যাপ্ত সিস্টেম হার্ডেনিং, নিয়মিত অডিট, লগ মনিটরিং বা ইনসিডেন্ট রেসপন্স ব্যবস্থা পুরোপুরি সক্রিয় করতে পারেনি, যার ফলে ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, সাধারণ ব্যবহারকারীও প্রতিনিয়ত টার্গেট হচ্ছে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিশিং, OTP প্রতারণা, লিংক-ট্র্যাপিং এবং অ্যাকাউন্ট হাইজ্যাকিংয়ের মাধ্যমে। অপরাধীরা এখন আরও বুদ্ধিমান ও সংগঠিত। তারা বহুমাত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে, পরিচয় চুরি করে এবং ব্যাংকিং তথ্য হাতিয়ে নেয়। অনেক সময় ব্যবহারকারী নিজের অজান্তেই ব্যক্তিগত তথ্য অপরাধীদের হাতে তুলে দেয়।
বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তা আইন ও নীতিমালার উন্নতি হলেও বাস্তবপ্রয়োগ, তদারকি, দক্ষ জনবল এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতার ঘাটতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সাইবার নিরাপত্তা এখন আর শুধু প্রযুক্তিগত বিষয় নয়—এটি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, নীতি এবং ব্যবস্থাপনার সমন্বিত একটি ক্ষেত্র। তাই শুধু ফায়ারওয়াল স্থাপন করলেই হবে না; প্রয়োজন শক্তিশালী অ্যাক্সেস কন্ট্রোল, মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন, নিয়মিত আপডেট, ব্যাকআপ, ভলনারেবিলিটি স্ক্যান, থ্রেট হান্টিং এবং একটি পরিপূর্ণ ইনসিডেন্ট রেসপন্স সিস্টেম।
এ ছাড়াও সচেতনতা এখন সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা। প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যক্তিগত পর্যায় পর্যন্ত সবাইকে বুঝতে হবে যে সাইবার নিরাপত্তা একটি চলমান প্রক্রিয়া—একদিনের কাজ নয়। কর্মীদের প্রশিক্ষণ, নিয়মিত রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা এবং সর্বশেষ নিরাপত্তা পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি।
সব মিলিয়ে ২০২৫ সাল বাংলাদেশকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—ডিজিটাল উন্নতির সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তায় সমান বিনিয়োগ ও গুরুত্ব না দিলে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হবে। তাই এখন সময় নিশ্চিত করা যে আমাদের সিস্টেম, ডেটা এবং নাগরিকের তথ্য সুরক্ষিত আছে। সাইবার নিরাপত্তা আর অতিরিক্ত খরচ নয়; এটি দেশের ডিজিটাল ভবিষ্যতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
❤ 4 · 💬 3
Want to like or comment? Sign in or create an account.