প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা ২০২৪ – বিশ্লেষণ ও সুপারিশ
by আরিফ • Dec 2, 2025 • 20:44
প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা ২০২৪ বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা কাঠামোকে আধুনিক ও আরও কার্যকর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের ডিজিটাল অবকাঠামো দ্রুত সম্প্রসারিত হওয়ায় নাগরিক, প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি সেবায় প্রযুক্তিনির্ভরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, আর এই প্রসারই সাইবার নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস, র্যানসমওয়্যার হামলা, আর্থিক প্রতারণা, সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ নানা ধরনের সাইবার অপরাধ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে একটি শক্তিশালী ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। নতুন বিধিমালা মূলত এসব সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত মানদণ্ড, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, জরুরি প্রতিক্রিয়া প্রক্রিয়া ও তথ্য সুরক্ষা নীতিকে এক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে চায়। এতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতকে সাইবার হুমকি শনাক্ত ও প্রতিরোধে বাধ্যতামূলক নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের সাইবার রেজিলিয়েন্সকে আরও শক্তিশালী করবে। নতুন নীতিমালায় ডেটা প্রাইভেসি, নেটওয়ার্ক সুরক্ষা, লগিং ও মনিটরিংয়ের মতো প্রযুক্তিগত প্রটোকলগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ দ্রুত শনাক্ত করা যায়। একই সঙ্গে, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, সাইবার প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা এবং নিয়মিত অডিট পরিচালনার বিষয়গুলোও গুরুত্ব অর্জন করেছে। এটি শুধু বড় প্রতিষ্ঠান নয়, বরং ব্যাংক, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্যও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ এসব ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি ডেটা লেনদেন হয় এবং আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে। বিধিমালায় ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (IRT) প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে যেকোনো সাইবার হামলার ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায় এবং ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। পাশাপাশি, অপরাধীদের শনাক্ত করতে ডিজিটাল ফরেনসিক ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, নীতিমালার কিছু অংশে আরও স্পষ্টতা প্রয়োজন, বিশেষ করে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর বাস্তবায়ন সক্ষমতা বিবেচনা করে যুক্তিসংগত নির্দেশনা নির্ধারণ করতে হবে। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার, বেসরকারি খাত ও নাগরিকদের সম্মিলিত অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি, কারণ প্রযুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা একক কোনো পক্ষের দ্বারা সম্ভব নয়। সাধারণ ব্যবহারকারীদের শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার, দুই ধাপ যাচাইকরণ সক্রিয় রাখা, সন্দেহজনক লিংক এড়িয়ে চলা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য শেয়ারিংয়ে সতর্ক আচরণ করা উচিত। একই সঙ্গে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মিত ব্যাকআপ নেওয়া, সিস্টেম আপডেট রাখা এবং এনক্রিপশন ব্যবহারের মতো নিরাপত্তা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। ‘প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা ২০২৪’ বাস্তবায়িত হলে দেশের আইটি অবকাঠামো আরও নিরাপদ হবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগের উন্নয়ন ধারাবাহিকতা আরও সুদৃঢ় হবে। এ নীতিমালা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা গেলে সাইবার অপরাধ কমবে, নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকবে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ইকোসিস্টেম আরও স্থিতিশীল হবে। তাই বিধিমালা নিয়ে সচেতন আলোচনা, বাস্তবসম্মত সুপারিশ এবং কার্যকর বাস্তবায়নই সাইবার নিরাপদ বাংলাদেশের পথকে আরও সুদৃঢ় করবে।
❤ 4 · 💬 4